মাহাবুব আলম খান, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২১
বার্সেলোনা ছেড়ে চলে যাবেন মেসি। কিন্তু কোথায় যাবেন? এই ভাবনা এখন শুধু তার একার না, তার অগনিত ভক্তদেরও। তবে তার নতুন ক্লাবে যাওয়া না যাওয়া অনেকটাই নির্ভর করছে শেখ–আমিরদের শখ, জেদ আর ইচ্ছের উপর।
এর ব্যাখ্যা দেয়া যেতে পারে একটি মজার ঘটনা দিয়ে।
তখন ২০১৭ সাল। ঐ বছরের নভেম্বর মাসে নিউ ইয়র্কের এক নিলাম থেকে লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা ছবি ‘সালভাতোর মুন্ডি’ বেনামে কিনে নেন সৌদির যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। নিলামের তুমুল হাঁক ডাকে ৪৫০ মিলিয়ন ডলারে যুবরাজের জেদের কাছে হেরে যায় প্রতিপক্ষ।
যদিও ছবিটির দাম ৮০ থেকে ১৫০ মিলিয়ন ডলারের বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু কাতারের কেউ বিড করছে ভেবেই যুবরাজ ছিলেন নাছোড়বান্দা। কাতারের কাছে কিছুতেই হারবেন না তিনি। যদিও পরবর্তীতে জানা যায় যে নিলামের সাথে কাতারের আদৌ কোনো সংশ্লিষ্টতাই ছিলো না।
কিন্তু এর সাথে মেসির দল বদলের সম্পর্ক কি?
আসলে যেদিকে সৌদি আরব, সেদিকেই সংযুক্ত আরব আমিরাত। আর অন্যদিকে কাতার। রাজনীতি, সংস্কার, পররাষ্ট্র নীতি কিংবা আভিজাত্য; সবকিছুতেই সৌদি–আমিরাতের অবস্থান কাতারের বিপরীতে। বিরোধ এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে সৌদিতে কাতারের বিমান পর্যন্ত নিষিদ্ধ। মেসি এখন তাদের কাছে নতুন এক শিল্পকর্মের মতই। আর লড়াইটা ঠিক এখানেই।
একদল যদি সুউচ্চ অট্রালিকা তৈরি করে, তবে অন্য দলেরও তা করা চাই। এই গোটা বিষয়টা খেলাধুলায় ছড়িয়ে পড়েছে আরো বেশি। টেনিস, বক্সিং, কার–রেস থেকে শুরু করে নতুন স্টেডিয়াম বানানো; সবক্ষেত্রে একদলকে ছাড়িয়ে যেতে চায় অন্যদল।
এই লড়াইয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজ পরিবারের অন্যতম সদস্য ও ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টার শেখ মানসুর বিন জায়েদ আল নাহিয়ান ২০০৮ সালে যখন ম্যানচেস্টার সিটি কিনে নেন, তার ঠিক চার বছরের ব্যবধানে কাতারের আমির তামিম বিন হামাদ আল থানি কিনে নেন প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন।
১৭ বছর ধরে বার্সেলোনায় খেলার পর মেসি এখন তার শেষ সময়টা কাটাচ্ছেন। চুক্তি শেষ হতে আর মাত্র কয়েক মাস বাকি। সাধারণত চুক্তি শেষ হবার ছয় মাস আগে একজন খেলোয়াড় দল বদল নিয়ে আলাপ আলোচনা শুরু করতে পারেন। মেসি ও তার এজেন্ট ঠিক সেটাই করছেন।
কিন্তু আলোচনার পুরোটাই হচ্ছে এখন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি ও ফরাসি লিগ প্যারিস সেইন্ট জার্মেইনকে (পিএসজি) ঘিরে। কারণ, খুব কম দলই আছে যারা মেসিকে ৬০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে দলে নিতে পারে, আর তাই স্বাভাবিকভাবেই আলোচনায় এখন এই দুটি ক্লাবই। তবে এই আলোচনার নেপথ্যে রয়েছে নাহিয়ান–তামিমের আভিজাত্যের লড়াই। লড়াই চলছে সৌদি–আমিরাত আর কাতারের রাজ রক্তের।
সৌদি যুবরাজ তার বন্ধুদের নিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্লাবও কিনতে চান। সৌদি–আমিরাত বলয়ের নাহিয়ানের আবুধাবি ইউনাইটেড গ্রুপ ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া আর ভারত ফুটবল ক্লাব কিনে নিয়েছে। আর তামিমের কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্টস নেইমারসহ দামী খেলোয়াড় নিয়ে সাজিয়ে তুলছে পিএসজি। এমনকি ক্রীড়াপ্রেমী তামিমের নেতৃত্বেই কাতার আয়োজন করছে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল।
মেসির ওপর চোখ আছে নাহিয়ান–তামিম দুজনেরই। এ যেন ভিন্ন এক মেসি–রোনালদোর লড়াই। তফাৎ শুধু এই যে নাহিয়ান–তামিমের খেলা বল দিয়ে নয়, টাকা দিয়ে। তবে এই দুজনের জেদকে টপকে মেসিকে অন্য কোন দল নিতে পারবে কিনা সেটা সময়ই বলে দেবে।
মার্চের শুরুতে বার্সেলোনার ক্লাব নির্বাচনের পর পরিস্কার হবে আরও অনেক কিছু।