ভাসমান শ্রমিকদের নিয়ে সময় নিউজের তামাশা

খেঁটে খাওয়া ভাসমান শ্রমিকদের নিয়ে সংবাদ নতুন নয়। কাজের অভাবে দিন মজুরদের দুঃখ কষ্টের বর্ণনা দিয়ে এসব খবর ছবিসহ প্রকাশিত হয়। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে দিনমজুরদের অবস্থা আরও করুণ। এ নিয়ে গত কয়েক মাস বিভিন্ন মিডিয়া নিউজ করছে। এসব নিউজের শিরোনাম যেমন আবেদনময়ী তেমনি মূল সংবাদে থাকে তথ্যবহুল বর্ণনাও। এর মধ্য দিয়ে সমাজের বঞ্চিত এক শ্রেণির বাস্তব চিত্র তুলে ধরার পাশাপাশি পরিশ্রম করে উপার্জনের জন্য তাদের সন্মান করা হয়।

তাদের কষ্ট ও অসহায়ত্ব নিয়ে আপত্তিকর, অপমানজনক বা মনগড়া সংবাদ করা অনাকাঙ্খিত। তবে এমন নীতিহীন কাজই করেছে Somoy Television-এর অনলাইন পোর্টাল “মানুষ বেচাকেনার হাট!” শিরোনামে একটি খবর প্রকাশের মাধ্যমে। ১৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত সংবাদের এমন শিরোনাম এবং ভাসমান শ্রমিকদের বর্ণনা কোনভাবেই কাম্য নয়।

চটকদার ও বিভ্রান্তিকর শিরোনাম করে পাঠকদের আকর্ষণ করার প্রবনতা অধিকাংশ সংবাদ মাধ্যমেই দেখা যায়। আর এমনটি করতে গিয়ে মুল ধারার অনেক মিডিয়া সাংবাদিকতার নীতি-নৈতিকতার বিসর্জন দিতেও দ্বিধা করে না। এই ধারাবাহিকতায় সময় নিউজের এরকম খবর সাংবাদিকতাকে আরও এক ধাপ নিচে নামাল।

“মানুষ বেচাকেনার হাট! শিরোনামে নিম্নমানের সংবাদে পাঠক বিভ্রান্ত হয়েছে। এমনভাবে নিউজ করা হয়েছে যেন সত্যিই মানুষ কেনা বেচা হচ্ছে!

খবরে বলা হয়েছে “দাসপ্রথা বিলুপ্ত হলেও এখনও মানুষ কেনা-বেচা হয়, হাট বসে রংপুরে। ভোর বেলা থেকে মানুষ আসা শুরু করে এসব হাটে, অপেক্ষায় থাকে নিজেকে বিক্রির জন্য। ক্রেতা এসে পছন্দ ও দরদাম করে নিয়ে যায় তাদের।“

বাংলাদেশের ভাসমান শ্রমিকদের কাজ খোঁজার এটি কোন নুতন চিত্র নয়। ভাসমান শ্রমিকরা কাজ খোঁজার জন্য একটি যায়গায় জড়ো হয়। যাদের প্রয়োজন হয় তারা সেই জায়গা থেকে চুক্তিভিত্তিক বা দিনমজুরী ঠিক করেন। সেখান থেকে শ্রমিকরা কাজে যায়। কিন্তু নিউজে এই প্রাত্যহিক কাজ করার পদ্ধতিটি নতুন করে উপস্থাপন করতে গিয়ে রিপোর্টার যা লিখেছেন তা সাংবাদিকতার নীতির বাইরে।

নিউজে আরও লেখা হয় “আলাদা আলাদা দলবেঁধে বসে থাকা মানুষগুলো অপেক্ষা করছে ক্রেতা বা খরিদ্দারের। খরিদ্দার এসে পছন্দ মতো লোক, সংখ্যা ও দাম বললে নির্দিষ্ট একটা কাজ বা পুরো দিনের জন্য নিজেকে বিক্রি করে দেবে এই মানুষগুলো। আর এভাবে বিক্রি করতে পারলে তবেই তাদের পরিবারের খাওয়া-পাড়ার ব্যবস্থা হয়।” এমন বর্ণনা শুধু আপত্তিকরই নয়, বরং খেঁটে খাওয়া শ্রমিকদের জন্য অত্যন্ত অসম্মানজনক। অনেকে এই নিউজের সমালচনা করেছেন।

এ ধরণের শ্রমিকরা মূলত মাটিকাটা, ইটভাঙ্গার, নির্মাণ ও কৃষি কাজ করে। তারা নিজেদের বিক্রি করে দেন বলে রিপোর্টে বার বার বলা হলেও স্পষ্ট ভাবে তাদের কাজের ধরণ, মজুরি, সমস্যা সম্পর্কে কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। পুরো সংবাদটি মনগড়া গল্পের মত লেখা হয়েছে। অথচ এই মানুষগুলো ঘাম ঝরিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে।

ভাসমান শ্রমিকদের নিয়ে অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমেও সম্প্রতি নিউজ করা হয় তবে তা সময় নিউজের মত নিম্নমানের নয়। যেমন কালের কণ্ঠ ২৭ এপ্রিল “কষ্টে নির্মাণ খাতের ৩৫ লাখ শ্রমিক” শিরোনামে এবং Dhaka Tribune ৩০ মার্চ “Testing times for day labourers as work opportunities fall drastically” শিরোনামে সংবাদ করেছে।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.