২৩ আগস্ট বাংলানিউজে প্রকাশিত একটি নিউজে বলা হয়, RAB-5 জয়পুরহাট ক্যাম্পের একটি দল নওগাঁর সাপাহার উপজেলার খঞ্জনপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মোঃ সেলিম নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১৯৪ বোতল ফেন্সিডিলসহ প্রাক-ব্রিটিশ, ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান আমলের তিনটি মুদ্রা উদ্ধার করে। তিনটি মুদ্রার দাম বলা হয়েছে ৮৮ লাখ টাকা। নিউজের সঙ্গে কয়েনের ছবি দিয়ে বাংলানিউজের ওয়াটার মার্ক করা হয়।
বাংলানিউজের শাপাহার প্রতিনিধি Factখুঁজিকে জানান, RAB-5 জয়পুরহাট ক্যাম্পের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির ভিত্তিতে সংবাদটি করা হয়েছে যেখানে বলা হয়, ঐ ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এমএম মোহাইমেনুর রশিদের নেতৃত্বে অভিযানটি পরিচালিত হয়। বিজ্ঞপ্তিতে প্রাক-ব্রিটিশ আমলের মুদ্রার মূল্য আনুমানিক ৫০ লাখ টাকা, ব্রিটিশ আমলের মুদ্রাটির মূল্য ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও পাকিস্তান আমলের মুদ্রাটির মূল্য আড়াই লাখ টাকা।
এ বিষয়ে শাপাহার থানার ওসি আব্দুল হাই বলেন, কয়েনের দামের বিষয়ে তারা এ পর্যন্ত কোন কথা বলেননি। এর দাম সম্পর্কেও থানা থেকে সাংবাদিকদের কিছু বলাও হয়নি।
বিষয়েটি নিয়ে জয়পুরহাট Rapid Action Battalion (RAB-5) এর একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে Factখুঁজি কথা বলে। একজন কর্মকর্তা জানান, প্রত্নতাত্ত্বিকদের সঙ্গে কথা বলেই দাম অনুমান করা হয়েছে। যদিও কোন বিশেষজ্ঞর নাম তিনি নির্দিষ্ট করে বলেননি। ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাইমেনুর রশিদ জানান, প্রত্নতাত্বিক অধিদপ্তর থেকে দামের অনুমান দেয়া হয়েছে।
কয়েনগুলোর মূল্য সম্পর্কে ধারণা পেতে Factখুঁজি প্রত্নতত্ত্ববিদ ডঃ একেএম শাহনেওয়াজের সাথে যোগাযোগ করে। তিনি বলেন, ব্রিটিশ এবং পাকিস্তান আমলের মুদ্রা দুর্লভ নয়, বরং অনেক সহজলভ্য। তাই এগুলোর এন্টিক মূল্য কম। তিনি জানান, পাকিস্তানের মুদ্রার এন্টিক মূল্য নেই বললেই চলে। উদ্ধারকৃত তিনটি মুদ্রার যে দাম ধরা হয়েছে তা অস্বাভাবিক।
“এধরণের মুদ্রার মূল্য নির্ধারণ আন্দাজে হয় না। মূল্য নির্ধারণ করতে হলে সেগুলোকে নিলামে উঠাতে হয়, যা আমাদের দেশে হয়না বললেই চলে। বিভিন্ন স্বার্থে উদ্ধারকারীরা সাধারণত এসবের abnormal মূল্য দেখায়। আর মিডিয়া যাচাই না করে সেটা চাপিয়ে দেয়, যা মানুষেকে বিভ্রান্ত করে,” এভাবেই ব্যাখ্যা করেন ডঃ শাহনেওয়াজ।
প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক নাহীদ সুলতানা টেলিফোনে Factখুঁজিকে বলেন, “আমরা এসব মুদ্রার মূল্য নির্ধারণ করিনা।”
বাংলানিউজ ডট কমে দেয়া কয়েনগুলোর ছবি দেখে দেশের কয়েন সংগ্রাহকরা জানান, কয়েনের দাম নির্ভর করে মূলত কয়েনগুলো কতটা বিরল তার উপর। তারা বলেন, যে কয়েনগুলোর ছবি দেয়া হয়েছে সেগুলো “rare” নয়। তিনটি কয়েনের দাম ৮৮ টাকাও না হতে পারে বলে তারা সন্দেহ প্রকাশ করেন।
ছবি অনুযায়ী পাকিস্তানের ২৫ পয়সা মূল্যমানের যে কয়েনটির দাম আড়াই লাখ টাকা অনুমান করা হয়েছে। পাশাপাশি ebay অনলাইনেও সেগুলো আরো কিছু মুদ্রাসহ পুরো মোট ছয়টির সেট বিক্রি হচ্ছে বাংলাদেশী টাকার প্রায় $13 অর্থাৎ ১১০০ টাকায়।
এ বিষয়ে Factখুঁজি বিশ্বের বড় কয়েন অকশন হাউজ “Heritage Numismatic Auctions” এর ওয়েব সাইটেও এ ধরণের কয়েনের উচ্চমূল্যের কোন প্রমাণ খুঁজে পায়নি। যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক খ্যাতনামা ”Numismatic Guaranty Corporation (NGC)”-এর ওয়েবসাইটে পাকিস্তানের উল্লেখিত কয়েনটির দাম লেখা আছে বিশ সেন্ট থেকে এক ডলার ২০ সেন্ট বা বাংলাদশেী টাকায় সব্বোর্চ ১১০ টাকা। কয়েনটি বানানো (minted 30,392,000) হয় তিন কোটিরও বেশী। যা এখনও অনেকের কাছেই রয়েছে বলে মনে করা হয়। উপমহাদেশের দেশগুলোতে এই কয়েনটি আরো সহজলভ্য বলে জানান সংগ্রাহকরা। যে কয়েনটির দাম ৫০ লাখ টাকা অনুমান করা হচ্ছে ক্ষয়জনিত কারণে সেটির মূল্যমান আরো কম বলে মনে করেন তারা।
অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, প্রচারণা ও কৃতিত্ব পেতে সাধারণত এসব মুদ্রার অস্বাভাবিক, উচ্চ মূল্য ধরা হয়। আর এর ভিত্তিতে সংবাদ বা গুজব ছড়ালে কিছু অসাধু ব্যক্তি প্রতরণা করার সুযোগ পায়। তক্ষক, মুদ্রা, সাপ এবং ফুলের দাম কয়েক হাজার কোটি টাকা এধরণের গুজব ছড়িয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে অনেক দিন থেকেই। এধরনের ভুল তথ্য ও নিউজ এধরণের প্রতারকদের প্রতারণা করার সুযোগ আরো বাড়িয়ে দেবে বলে বিশেষজ্ঞ ও সংগ্রাহকরা মনে করেন।