বিবিসি বাংলার অতিরঞ্জিত, স্ববিরোধী খবর বিভ্রান্তি ছড়াল

“ইসলামিক স্টেট বাংলাদেশের জন্য নতুন আমীর ঘোষণা করেছে বলে খবর, সত্যতা নিয়ে সংশয়” শিরোনামে বিবিসি বাংলা ৮ সেপ্টেম্বর একটি সংবাদ প্রকাশ করে যা পাঠকদের মাঝে সন্দেহ ও সংশয়ের জন্ম দেয়। অনেকে প্রশ্ন তোলেন, কোন বিষয়ের সত্যতা নিয়ে যদি সংশয় থাকে তাহলে কিভাবে সেটা নিউজ হয়? আর হলেও তার গুণগত মান কতটুকু?

এই খবরের মূল সুত্র হল জি নিউজের কলকাতা প্রতিনিধি পুজা মেহতার একটি টুইট। “খলিফা বেঙ্গল” নামে আইসিস-পন্থী এক টেলিগ্রাম চ্যানেলে একটি ঘোষণা দেখে তিনি টুইট করেন। বিষয়টি যাচাই করার জন্য একদিকে বিবিসি যেমন এই সাংবাদিকের সাথে যোগাযোগ করেনি, অন্যদিকে “খলিফা বেঙ্গল” চ্যানেলের ঘোষণা সত্য না মিথ্যা সেটাও খতিয়ে দেখেনি। বরং খবরটির সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে নিজেরাই এ ধরেণের স্পর্শকাতর সংবাদ করে। এতে অনেকেই বিভ্রান্ত হয় এবং মনে করেন ইসলামিক স্টেট বাংলাদেশে যথেষ্ট সক্রিয় এবং শক্তিশালী। শুধু আমীর নিয়োগ বাকি ছিল।

বিষয়টি নিয়ে Factখুঁজি ৯ সেপ্টেম্বর পুজা মেহতার সাথে টুইটারে যোগাযোগ হয়। প্রথমেই তিনি বিস্ময় প্রকাশ করেন কিভাবে বিবিসি তাঁর টুইটের উপর ভিত্তি করে এমন একটি সংবাদ করতে পারে। তিনি বলেন,”বিবিসির উচিত ছিল অন্তত আমার সাথে কথা বলা, কিন্তু তারা আমার সাথে যোগাযোগ করেনি। এক প্রশ্নের জবাবে পুজা মেহতা জানান, তিনি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের ওপর নিউজ করলেও এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নন।

একজন সাংবাদিকের টুইটের উপর ভিত্তি করে কিভাবে একটি নিউজ করা যায় এনিয়ে অনেকে প্রশ্ন তোলেন। সেটাও আবার যাচাই-বাছাই না করে। সাধারণত, একটি বিষয়ে কেউ বিশেষজ্ঞ হলে তাঁর রেফারান্স দিয়ে অনেক গণমাধ্যম সংবাদ পরিবেশন করে। যেমন The New York Times এর সাংবাদিক Rukmini Callimachi আইএস বিশেষজ্ঞ হিসেবে বিশ্বব্যাপী পরিচিত এবং আইএস বা উগ্র জঙ্গিবাদ নিয়ে তিনি কিছু লিখলে সেটা গ্রহণযোগ্য মনে করা হয়।

পুজা মেহতা জঙ্গিবাদ বিশেষজ্ঞ নন। তিনি নামকরা বা বহুল পরিচিত সাংবাদিকও নন। তাই শুধু তাঁর টুইটের উপর ভিত্তি করে সংবাদ করায় নিউজটির বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। আর “খলিফা বেঙ্গল” চ্যানেলের তথ্যও বিশ্বাস করা যায় না। মজার ব্যাপার হচ্ছে বিবিসির লেখা নিউজেই এক বিশেষজ্ঞ এ বিষয়ে স্পষ্ট বলেছেন।

মেহতার টুইটে করা দাবী নিয়ে বিবিসির রিপোর্টে লেখা হয়েছে, জিহাদি সংগঠনগুলোর তৎপরতার খোঁজ-খবর রাখেন এমন বিশেষজ্ঞরা এই দাবির ব্যাপারে গুরুতর সংশয় প্রকাশ করছেন। কিন্তু এত “গুরুতর” সংশয় দেখার পরও বিবিসি এই নিউজটি বাতিল না করে কেন প্রচার করলো এবং বিবিসি কেন পুজা মেহতার টুইটকে এত গুরুত্ব দিলো বিষয়টি পাঠকের কাছে বোধগম্য হয়নি।

এধরণের টেলিগ্রাম চ্যানেলের ঘোষণা বা এর প্রেক্ষিতে একজন সাংবাদিকের টুইট নিয়ে সংবাদ পরিবেশন করা থেকে বাংলাদেশের গণমাধ্যম বিরত থাকে। তবে বিবিসির সংবাদ করার পরপরই সেই নিউজের বরাত দিয়ে বা নিউজটি অনুসরণ করে দেশের অনেক আইএস এর নতুন আমীর ঘোষণা করেছে সংবাদ প্রকাশ করে। অনেকে ফেসবুক ও ইউটিউবেও ছড়িয়ে দেয়।

জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকজন সাংবাদিক ও পুলিশ কর্মকর্তার সাথে Factখুঁজি বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছে। মুল ধারার দুজন সাংবাদিক বলেন “খলিফা বেঙ্গল” নামে টেলিগ্রাম চ্যানেলের ঘোষণার বিশ্বাসযোগ্য না হওায় তারা খবরটি এড়িয়ে যান। পুলিশের কাছ থেকেও এর সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি বলে তারা জানান।

পাশাপাশি পুলিশের কয়েকজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন যে নতুন আমীর নিয়োগের বিষয়টি তারা এখনও বিচার-বিশ্লেষণ করছেন। তাদের মতে, জঙ্গিবাদ নিয়ে প্রায়ই বিভিন্ন ধরনের তথ্য ছড়িয়ে দেয়া হয় যার অনেক কিছু বিভ্রান্তিকর ও অপপ্রচারমূলক। সম্প্রতি ঢাকার পল্লবি থানায় বোমা বিস্ফোরণের বিষয়টি উল্লেখ করে তারা বলেন, এই হামলার সাথে আই এস জড়িত না থাকলেও Site Intelligence আইএস হামলা চালিয়েছে বলে প্রচার করে এবং এর ভিত্তিতে দেশের মিডিয়া নিউজ করে। অথচ এমন দাবির কোন ভিত্তি নেই। কেননা, কিছু পুলিশ সদস্য নিজেরাই এই বিস্ফোরণে ঘটায়।

বিবিসির নিউজের একটি বড় অংশ জুড়ে আছে সুইডেনে অবস্থানরত বাংলাদেশি লেখক এবং সাংবাদিক তাসনীম খলিলের মন্তব্য যিনি পুজা মেহতা এবং টেলিগ্রাম চ্যানেল “খলিফা বেঙ্গল” এর দাবি বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে নাকচ করে দিয়েছেন।

বাংলাদেশে আই এস এর আমীর নিয়ে অতীতে কয়েক জনের নাম শোনা গেছে। এর কোনটি সত্য আর কোনটি গুজব সে ব্যপারে নিশ্চিত করে কেউ কিছু বলতে পারেনি।

Comments

While most comments will be posted if they are on-topic and not abusive, moderation decisions are subjective. Published comments are readers’ own views and The Business Standard does not endorse any of the readers’ comments.