Factখুঁজি প্রতিবেদন, ১১ মে ২০২১
৮ মে, শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খান দাবী করেন, “আমরা চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে। বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি আমরা চাঁদাবাজ নই। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন, চাঁদাবাজি থাকবে না।“
শাজাহান খান নিজে একজন পরিবহণ মালিক। তিনি ২০০৯–২০১৯ সাল পর্যন্ত নৌপরিবহন মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকলেও নিজেকে ইউনিয়ন লিডার পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তিনি প্রায় বলে থাকেন যে তিনি প্রায় ৫০ বছর যাবত পরিবহণ সেক্টরের সাথে জড়িত আছেন এবং শ্রমিকরাই তার বড় শক্তি।
চাঁদাবাজি নিয়ে সরকারদলীয় সাংসদের এই দাবী কি সত্য, নাকি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন?
গত ২ এপ্রিল প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শুধু মানিকগঞ্জেই বছরে ১০ কোটি টাকার চাাঁদা তোলেন সরকারদলীয়রা। জেলা পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের ব্যানারের ছায়ায় এই চাঁদা তোলা হয়। এ থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় যে ক্ষমতাশীন দলের নেতারা, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা চাঁদাবাজির সাথে জড়িত।
একটু পেছনে ফিরে যাই। “Extortion Rampant in Transport Sector,” এই শিরোনামে The Daily Star একটি খবর প্রকাশ করে ২০১৮ সালের ৮ জুলাই। প্রতিবেদন আনুযায়ী, তখনকার প্রতিমন্ত্রি, জাতীয় পার্টির নেতা এবং পরিবহনের আরেক নেতা মশিউর রহমান রাঙ্গা বাস–ট্রাকে চাঁদাবাজির জন্য শাজাহান খানের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনকে দোষারোপ করেন।
“Though the Federation is supposed to be an organization for transport workers, many non-workers have been included in it. And to maintain a huge number of members, it indulges in extortion from transport,” ইউনিয়ন পরিচালনায় চাঁদাবাজি করা হয় বলে রাঙ্গা অভিযোগ করেন। তিনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি।
প্রতি বছর পরিবহন সেক্টর থেকে কত টাকা চাঁদা তোলা হয় তার সঠিক কোন পরিসংখ্যান নাই। তবে এর কিছুটা ধারনা পাওয়া যায় ২০১৯ সালের ২৯ আগস্ট প্রথম আলোয় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে। যেখানে বলা হয়, মহাসড়কে বছরে ৮৭ কোটি টাকার চাঁদাবাজি হয়।
সে বছর হাইওয়ে পুলিশের বার্ষিক প্রশাসনিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের বিভিন্ন স্থানে গড়ে ওঠা ২১৫ টি সংস্থা ও সংগঠন মহাসড়কে চলাচলকারী ৫৮ হাজার ৭১৯ টি যানবাহন থেকে দিনে গড়ে ২৪ লাখ টাকা চাঁদা তুলেছে। বছরে সেই টাকার পরিমাণ ৮৭ কোটি টাকা। এই চাঁদার টাকায় গোপনে পকেট ভারী হয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মী, রাজনীতিবিদ এবং পুলিশ সদস্যদের।
পরিবহন খাতের চাঁদাবাজিকে ঘিরে যে শুধু কিছু মানুষের পকেট ভারী হয় তা না, এটিকে ঘিরে নিয়ন্ত্রিত হয় রাজনীতিও। এরকম খবরের নজির দেখা যাক। এ বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবহনে চাঁদাবাজির চাঁদা ঘিরেই নিয়ন্ত্রিত হয় বগুড়ার রাজনীতি। উত্তরবঙ্গের ১১ জেলার যানবাহন চলাচল করে বগুড়ার ওপর দিয়ে। আর এসব পরিবহনে চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রণ যাদের হাতে, তাঁরা এখানকার রাজনীতিরও নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছেন।
পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি বন্ধে খোদ প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। ২০০৯ এর ৩ জুলাই The Daily Star প্রকাশিত আরেক প্রতিবেদন বলছে, প্রধানমন্ত্রী শাহজাহান খানকে পরিবহণ সেক্টরে চাঁদাবাজি বন্ধের নির্দেশ দেন। প্রতিবেদনের একটি অংশ এখানে তুলে ধরা হল, “Prime Minister (PM) Sheikh Hasina yesterday asked the newly inducted Shipping Minister Shahjahan Khan to check extortion in the transport sector. Hasina said this when Shahjahan, known as a popular trade union leader, attended the cabinet meeting for the first time since his appointment on Friday.”
পরিবহন সেক্টরে চাঁদাবাজি একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। যুগ যুগ ধরে অবৈধ এই কাজটি চলছে সারা দেশে। এ নিয়ে নিয়মিত গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। অনেক আলোচনা–সমালচনা হলেও চাঁদাবাজি চলছেই।