গতকাল দুপুরের পর থেকে দেশের সকল সংবাদমাধ্যমে জ্বালানী সাশ্রয়ের জন্য সরকারের নেয়া প্রস্তাব ও পদক্ষেপ নিয়ে সংবাদ প্রচার শুরু হয়। অনেক প্রস্তাবনার মধ্যে মসজিদে এসি বন্ধ রাখা কথাও বলা হয়। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার ঝড় উঠে। সব চেয়ে বেশি আলোচনা-সমালোচনা হতে থাকে মসজিদে এসি বন্ধ রাখা বিষয়টিকে ঘিরে। শুরু হয় অপপ্রচার, বিভ্রান্তি ছড়ানো।
মসজিদে এসি বন্ধ থাকার কথা যেভাবে আসেঃ
জ্বালানী সাশ্রয় নিয়ে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর অফিসে সভা করেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস, প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজসম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজসম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ।
সভা শেষে জ্বালানী সাশ্রয়ের জন্য গৃহীত পদক্ষেপ নিয়ে মিডিয়ায় নিউজ প্রকাশ হতে থাকে। সারাদেশে এক ঘণ্টা লোডশেডিং, রাত ৮টার পর সকল দোকানপাট বন্ধ, সপ্তাহে একদিন পেট্রোল পাম্প বন্ধ রাখা, সরকারি অফিসে এসি নিয়ন্ত্রণ করা, সরকারি পরিবহণ ব্যবহার কমান এবং মসজিদে এসি বন্ধ রাখার কথা বলা হয়। অনেক সংবাদমাধ্যম মসজিদে এসি বন্ধ রাখার বিষয়টিকে শিরোনাম করে।
যাচাই করে দেখা যায়, সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস ব্রিফিং করছেন। যমুনা টিভির এক সংবাদে তার বক্তব্য প্রচার করা হয়, সেখানে জ্বালানী সাশ্রয়ের জন্য কয়েকটি পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন তিনি। এর মধ্যে “ইসলামীক ফাউন্ডেসনের মাধ্যমে বলা যেন আগামী কয়েক মাস কোন মসজিদে এসি না চলে” এই কথাটিও পরিষ্কার ভাবে উল্লেখ করেন তিনি। তার বক্তব্যের লিঙ্কঃ https://web.facebook.com/watch/?extid=CL-UNK-UNK-UNK-AN_GK0T-GK1C-GK2C&v=721179798991094
মুখ্য সচিবের এই বক্তব্য অনলাইনে ব্যাপকভাবে প্রচার হয়। হাজার হাজার মানুষ এটা শেয়ার করে, এখনও তার ভিডিওটি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে।
মসজিদে এসি বন্ধ বিষয়টি গুজব নাঃ
গতকাল বিকাল ও সন্ধ্যা থেকে অনেকে তাদের ফেসবুকে প্রচার করতে থাকেন যে মসজিদে এসি বন্ধ বিষয়টি গুজব। এমন কোন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। মিডিয়া বা অন্যান্যরা এনিয়ে অপপ্রচার করছেন।
সরকার ও সরকারী দলের সমর্থকরাই এমনটি বলা শুরু করেন। তাদের অনেক জেনে-শুনেই এমন প্রচার করতে থাকেন। আবার অনেকে যাচাই না করে বা সত্যটা না জেনে এ বিষয়ে কথা বলতে থাকেন। এর মধ্যে বেশ কিছু সাংবাদিকও আছেন। অথচ প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তার বক্তব্যে এসি বন্ধ রাখার বিষয়টি পরিষ্কার ভাবে উল্লেখ করেছেন-যার প্রমান এখন অলাইনে আছে।
প্রতিমন্ত্রীর ব্যাখ্যাঃ
মসজিদে এসি বন্ধের বিষয় নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলাকালীন সময়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানী ও খনিজসম্পদ মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুরো বিষয়টি পরিষ্কার করেন। তিনি বলেন যে, সকল উপাশনালয়ে জ্বালানী সাশ্রয়ের কথা বলা হয়েছে। মসজিদসহ সকল উপাসনালয়ে প্রার্থনার সময় ছাড়া এসি বন্ধ থাকার কথা তিনি উল্লেখ করেন। প্রতিমন্ত্রীর বক্তব্যের লিঙ্কঃ https://web.facebook.com/watch/?v=7827485020658032
তবে পুরো বিষয়টিকে ঘিরে এক শ্রেণির মানুষ অপপ্রচার শুরু করে সরকার ও সরকারি দলের বিরুদ্ধে। সরকারিবিরোধী মহল এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অপপ্রচার করছে। তারা অনেক ধরনের অডিও-ভিডিও ক্লিপ বানিয়ে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছে। তবে সুযোগটি তৈরি করে দিয়েন সরকার।
আমাদের সিদ্ধান্তঃ মুখ্য সচিব মসজিদে এসি বন্ধ রাখার কথা বলেছেন, মিডিয়া ভুল সংবাদ পরিবেশন করেনি এবং পরবর্তীতে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ পুরো ব্যাপারটি পরিষ্কার করেছেন।